খ্রিস্টান মিশনারির আগ্রাসন : পর্ব ২

 ‎খ্রিস্টান মিশনারির আগ্রাসন : পর্ব -৩


‎★ সুস্থতা ও শান্তির মোহে ঈমানের বিসর্জন

‎সুস্থতা—এ এক অমূল্য নিয়ামত। দেহ যখন ব্যথাহীন, মন যখন প্রশান্ত, তখনই জীবন হয়ে ওঠে সুখময়। আর এই সুস্থতা ও শান্তির খোঁজে মানুষ ছোটে নানা স্থানে, নানা দুয়ারে। কেউ চিকিৎসকের কাছে, কেউ কবিরাজের আশায়, কেউ আবার ধর্মীয় কোনো ব্যক্তির কাছে।  কিন্তু আমরা  কতজন জানি, এই মোহের সুযোগ নিয়ে আজ এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের ঘরে, আমাদের গাঁয়ে, আমাদের সমাজে? শান্তি ও আরোগ্যের লোভ দেখিয়ে মুসলিম সমাজের ঈমান ধীরে ধীরে চুরি করে নিচ্ছে একদল মুখোশধারী —যারা ‘ 'খ্রিস্টান মিশনারি’ নামে পরিচিত।

ঘটনাটি ২০২২ সালের। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার একটি ছোট গ্রাম—নলছাপ্রা। এই গ্রামের হাইস্কুল পরিচালিত হয় খ্রিস্টান মিশনারিদের তত্ত্বাবধানে। নভেম্বর মাসের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ—তিন দিনব্যাপী স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ অনুষ্ঠান: “শান্তি ও আরোগ্যদায়ী সভা”।

প্রথমে বিষয়টি নিরীহ লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল এক সুপরিকল্পিত ধর্মান্তর অভিযানের চূড়ান্ত ধাপ।অনুষ্ঠানের বহু আগে থেকেই এলাকায় চলে মাইকিং, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ। জায়গায় জায়গায় তোরণ নির্মাণ। সঙ্গে বড় বড় ব্যানার।  প্রচারনার কোনো কমতি ছিল না। অনুষ্ঠান শুরুর দুই একদিন আগে  থেকে মিশনারি প্রতিনিধিরা গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়ায়।  দরজা থেকে দরজায়,বাড়ি থেকে বাড়ি গিয়ে দাওয়াত পৌঁছানো এবং ফ্রি টিকিট বিতরণ করে।  সঙ্গে  প্রলোভোনের টুপ। বলে- “আসেন ভাই, শান্তি পাবেন, সুস্থতা পাবেন!  শান্তি ও সুস্থতার পথ জানতে পারবেন। তিন দিনের অনুষ্ঠানে উপহারও জিততে পারেন! এলইডি টিভি, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ইস্ত্রীসহ অনেক কিছু!” সাথে আরও চমকপ্রদ এক আকর্ষণ—বিদেশি লোক! চীন ও ফিলিপাইন থেকে আসা বেশ কিছু লোক থাকবে। তারা আপনাদের কথা শুনবেন। আপনাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।

‎আরও বলে কিছু না হোক। কমসে কম তো বিনোদন  হবে- কনসার্ট, বিদেশি অতিথি, গান-বাজনা।


‎★নীরব আগ্রাসনের মুখোমুখি

২৫ তারিখ,২০২২ সাল।  অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেলে। গারো ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকেরা একে একে আসতে থাকে। মুসলমানরা আসছে। বসছে, আবার চলে যাচ্ছে। বাইরে রাস্তায় মেলা জমেছে। অনেকেই  মেলায় কেনাকাটা, ঘোরাঘুরি করছিল। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই চিত্র পাল্টায়। শুরু হয় উচ্চ স্বরে গান।

‎যে নামটি এত মধুর,যে নামে পাপী পায় ত্রাণ

‎যে নামে মিলে নাজাত, যে নাম দেয় নতুন প্রাণ।

‎যীশু,প্রভু যীশু......। মঞ্চে শিল্পীরা গান গাওয়ার পাশাপাশি ত্রোতাদের দিকেও মাইক্রোফোন ধরছিল,যেন তারাও একথাগুলো বলে। এভাবে দীর্ঘসময় গান চললো। 

ঘড়িতে রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। শীতের রাত।  চারপাশে ঘন কুয়াশা।  শীতের প্রকোপও বেশ। এবার মঞ্চে আসেন  এক বিদেশিনী—সাদা চামড়া, মায়াবী মুখ। ইংরেজিতে বলছেন, আর পাশ থেকে বাংলায় অনুবাদ করছেন। তার কথায় ছিল এক চরম ঈমানঘাতী আহ্বান। তিনি উপস্থিত সকলকে প্রার্থনার জন্য আহ্বান করলেন। বললেন, “যার যেখানে ব্যথা, সেখানে এক হাত রাখুন। আরেক হাত আকাশের দিকে তুলে ধরুন। মনে মনে ধ্যান করুন এ হাতটি প্রভু  যীশুর দিকে ধরেছেন। তিনি সকলকে তার সঙ্গে সঙ্গে বলার জন্য আহ্বান করেন। মাইকে বার বার ঘোষণা হচ্ছিলো,যারা পাপী সকলেই অংশ নিতে পারবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই।

‎এরপর তিনি এভাবে শুরু করলেন,

‎হে প্রভু যীশু, তুমি আমাদের ক্ষমা করো। আমরা তোমার পাপী সন্তান।আমাদের নতুন জীবন দাও। আমাদের সুস্থতা দান করো। তোমার সন্তানকে তুমি ক্ষমা করে দাও।

এভাবে এক লাইন বলছেন তিনি, আর শত শত মানুষ তা একসাথে পুনরাবৃত্তি করছে।

‎আমি নিজ চোখে দেখেছি—মুসলিম পরিচিত যুবকরাও হাত তুলে বলছে এসব বাক্য।

‎হৃদয় কেঁপে উঠলো। কলিজা যেন ছিঁড়ে গেলো।

‎আমার ভাই, আমার সন্তানতুল্য যুবক—আজ তার হাত উঠছে যীশুর দিকে!তার জিভ বলছে, “আমি তোমার পাপী সন্তান!” আফসোস। কিন্তু তখন কিছু করার ছিল না।

প্রার্থনা শেষে তারা পূর্বে থেকেই ঠিক করে রাখা কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নিলো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বললো,তাদের হাঁটুর ব্যাথা,বাতের ব্যথা,চোখ পিটপিট করা বন্ধ হওয়া,তোতলার তোতলানো ভাব চলে যাওয়া প্রভৃতি ঘটনা ঘটেছে। এরপর লটারির মাধ্যমে পূর্ব থেকেই নেওয়া টিকিটের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

২৬ নভেম্বর, ২০২২ সাল।

‎সেদিন ফজরের পর আমরা সেসকল যুবকদের বাড়িতে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি গতকাল যারা সেখানে অংশ নিয়েছিল। ভাই, সুস্থতা আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।

‎যে কাউকে আল্লাহ চাইলে ওসিলা করতে পারেন,

‎কিন্তু যীশুকে ডাকলে, আল্লাহর বদলে তার কাছে প্রার্থনা করলে, তাহলে তা শিরক! এটা কোনো দোয়া না—এটা ঈমান ধ্বংসের রাস্তা!” তারা ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে। কিন্তু এলাকাতে তখন রোগমুক্তির বিষয়টা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরের মহিলারা আরও বেশি উদগ্রীব হয়ে আছে সেখানে যাওয়ার জন্য। দ্বিতীয় দিন মানুষের উপচে পড়া ভীড়। শত শত মুসলিম নারী পুরুষের অংশগ্রহন। পূর্বের ন্যায় আজকেও আবার সেই প্রার্থনা। দেখলাম তিন ইজি বাইকে করে মুসলিম মহিলারা অংশ নিচ্ছে। পরনে বোরখা। তাদের সঙ্গে দেখা করা কিংবা কথা বলার সুযোগ ছিল না। অনুষ্ঠানে ছবি তোলা,ভিডিও করা নিষেধ ছিল।

প্রার্থনার শেষে দ প্রতিটি উপস্থিত ব্যক্তিকে দেওয়া হয় একটি বই।  বইটির নাম-

‎“ঈশ্বরের নতুন জীবনে আপনাকে স্বাগতম”

‎বইটির প্রচ্ছদে ছিল এক দাড়িওয়ালা, টুপি পরা বৃদ্ধের ছবি। দেখে মনে হবে, কোনো মাদ্রাসার হুজুর!কিন্তু হায়! এ ছিল আরেকটি ছলনার চিত্র।

‎মাথার টুপি, মুখে দাড়ি—এসব ব্যবহার করে মুসলিমদের ঈমানী অনুভূতির সাথে খেলছে এরা।

আমাদের সমাজে এখনো বহু মানুষ সহজ-সরল, বিশ্বাসপ্রবণ। এই সরলতাকে কাজে লাগিয়ে বহু জায়গায় খ্রিস্টান মিশনারিরা ‘শান্তি ও আরোগ্যের’ নামে ঈমান হরণ করছে। আমাদের উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, অন্যকে সচেতন করা এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে, ইসলাম কোনো “গুজব ভিত্তিক ধর্ম নয়”, বরং সত্য ও আলোর ধর্ম।

আমাদের ঈমানের মুল্য LED টিভি, রাইস কুকার, অথবা প্রার্থনার ভুয়া অভিনয়ে হারিয়ে যাওয়ার মতো নয়। এই ঈমানকে রক্ষা করতে হলে প্রত্যেককে নিজের জায়গা থেকে দাঁড়াতে হবে। সত্যিকার অর্থেই শান্তি ও আরোগ্য শুধু আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, তাঁরই প্রতি ফিরে যাওয়া ছাড়া মুক্তি নেই।

ভাই আমার, বোন আমার! একটু থামুন... ভাবুন...

‎যেখানে আমাদের ঈমান, জান্নাতের মূল চাবি,

‎সেখানে কীভাবে মাত্র একটা কুকারের জন্য, একটা গান শোনার জন্য, আমরা সেই ঈমান বিলিয়ে দেই?

‎আজই শপথ নেই—আমাদের সন্তানদের ঈমান রক্ষা করবো।শান্তির নামে ছদ্মবেশী শত্রুর ছোবল থেকে তাদের আগলে রাখবো।আর সুস্থতার আশায় আমরা যেন কখনো এমন রাস্তা না ধরি—যা আমাদের ঈমান হরণ করে নেয়। "হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর স্থির রাখো।আমাদের ঈমান হেফাজত করো।

‎আমাদের সন্তানদের গোমরাহী থেকে রক্ষা করো।"আমিন!

0 Comments

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post